শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

| ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির শেষ নেই

ক্যাম্পাস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির শেষ নেই

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় র‌্যাব ও পুলিশ ৭ জেলায় শিক্ষকসহ অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে। জব্দ করা হয়েছে শতাধিক মোবাইল, বেশকিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্র ও ব্যাংক চেক।

পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানায়, গত ৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আটক করা হয়। সবচেয়ে বেশি আটক করা হয়েছে গাইবান্ধা থেকে। জালিয়াতি চক্রের পাঁচ হোতা ও ৩০ পরীক্ষার্থীসহ মোট ৩৭ জনকে আটক করা হয়েছে এই জেলা থেকে। এছাড়া রংপুর থেকে আটক হয়েছেন ১৯ জন, যাদের মধ্যে রয়েছেন তিন শিক্ষকও। লালমনিরহাটে ১৩ ও ঠাকুরগাঁও থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আরও ৩ জেলায় কয়েকজনকে জালিয়াতির অভিযোগে আটকের খবর পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, আটককৃত পরীক্ষার্থীরা হল থেকে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের প্রশ্ন জানিয়ে দেয়। অন্যদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষকরা দ্রুত এসব প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দেয় চক্রটিকে। পরে চক্রের সদস্যরা প্রশ্নের উত্তরগুলো সেই ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে দিতো। এজন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অভিনব উপায়ে তৈরি মাস্টারকার্ডের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত করে জালিয়াতির সময় জালিয়াতি চক্রের পাঁচ হোতা ও ৩০ পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১৩)। গতকাল গাইবান্ধা সদরের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২টি ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত মাস্টারকার্ড, ১৯টি ব্লুটুথ ডিভাইস ও ১৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইলের মাধ্যমে জালিয়াতির চক্রের ৩৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এসময় ২৪ টি মাস্টার কার্ড, ২০ টি ব্লুথ এবং ১৭ টি মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেক উদ্ধার করা হয়।  সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত (পরীক্ষা চলাকালে) বিভিন্ন পরিক্ষা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। 

এ বিষয়ে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক আরাফাত ইসলাম এক প্রেস কনফারেন্সে জানান ৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় র‌্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে একটি জালিয়াতি চক্র ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে প্রাইমারি সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বন করে গাইবান্ধা জেলা শহরের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রাইমারি সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে।  পরে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে অভিযান পরিচালনা করে জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা-৫ জন ও ৩২ জন পরীক্ষার্থী কে তাদের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং মোবাইল ফোনসহ পরীক্ষার হলরুম হতে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মারুফ, মুন্না সোহেল, নজরুল ও সোহাগ বিভিন্ন পরীক্ষার্থীকে ১৪-১৮ লক্ষ টাকায় চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আসছিল। সোহেল ডিভাইস সংগ্রহ ও বিতরণ করেন, নজরুল পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন এবং মারুফ ও মুন্না বাহির থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন।

লালমনিরহাটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি করার অভিযোগে ১০ নারীসহ ১৩ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে পুলিশে সোপর্দ ও আরও ৩ পরীক্ষার্থীকে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, সরকারি মজিদা খাতুন কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি বালক ও বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এসব পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ১৬ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এরমধ্যে অপরাধ বিবেচনা করে ১৩ পরীক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামে  প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৩ প্রার্থীকে বহিস্কার ও গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ প্রার্থীকে। 

নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইলের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে পরীক্ষা দেওয়ার সময় ৩ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। সকালে পরীক্ষা চলাকালে জেলার সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

হবিগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় হবিগঞ্জে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে।