মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

| ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

ছাত্রলীগ থেকে গ্রুপ কিনে সাংবাদিকতা,  বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে তোলপাড় 

বেরোবিতে সাংবাদিকতার আড়ালে শক্তিশালি হচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

বেরোবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:২২, ১১ মে ২০২৫

বেরোবিতে সাংবাদিকতার আড়ালে শক্তিশালি হচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ হোন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এ ঘটনার পর থেকেই ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিন্তু থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। নামে বেনামে ফেইসবুক পেইজ থেকে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ফেইসবুকে সক্রিয় হতে দেখা যায় আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়াকে ও সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগরকে। গোপনে দল গোছানো শুরু করেছে নিষিদ্ধ এই ছাত্র সংগঠনটি। নামে বেনামে পেইজ খুলে সাংবাদিক ক্লাবের আড়ালে চলছে ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ এ 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর' নামে একটু গ্রুপ খোলেন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শামীমের ঘনিষ্ঠ গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজেদুল ইসলাম। সাত মাস পরে ৬ জুন ২০২০ গ্রুপটির নাম রাখা হয়, 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর শাখা'। একই তারিখে নাম আবার পরিবর্তন করে রাখা হয়  'বেরোবি ছাত্রলীগ পরিবার'। এরপর তিন সপ্তাহ পরে ২৫ শে জুন সেই গ্রুপটির নাম দেয়া হয় 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শহীদ মুখতার ইলাহী হল শাখা'। এর এক বছর পর আবারও নাম পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করা হয়।

 সাজেদুল ইসলামের ফেইসবুক প্রোফাইলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনা, আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক শামীমের প্রশংসা করে বিভিন্ন পোস্ট। এমনকি সাজেদুূল শহীদ মুখতার ইলাহি হলের শিক্ষার্থী হয়েও বিজয়-২৪ হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রভাব খাটিয়ে তখন সিট বাগিয়ে নিয়েছিলেন এবং এখন পর্যন্ত ঐ হলেই অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। জুলাই বিপ্লবের পর পিঠ বাঁচাতে ছাত্রদলের একজন বির্তকিত নেতার সহায়তা ছায়া সংগঠন ব্রুভাতে যোগদান করেন সাজেদুল। 

তবে জুলাই বিপ্লবের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে হল ছাড়তে বাধ্য হয়। ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর ব্যাপক ও বেপরোয়া সশস্ত্র হামলা চালানোর ফলে ছাত্র জনতার দাবিতে ২৩ অক্টোবর ২০২৪ আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ছাত্রলীগের কর্মকান্ড না থাকলেও সময়ের সাথে ক্যাম্পাসে গোপণে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান সংগঠন গুলো। গত মাসেই ছাত্রলীগের এক কর্মীকে ক্যাম্পাসের সামনে থেকে ধরে পুলিশে দেয় শাখা ছাত্রদলের কর্মীরা। 

জুলাই বিপ্লবের পর নতুন উপাচার্য নিয়োগ পেলে সাজেদুলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের গ্রুপটির নাম পরিবর্তন করে "Communication and Journalism Club, BRUR" নামে পেইজটির নাম পরিবর্তন করে সাংবাদিকতার নতুন গ্রুপ শুরু করেন। বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ক্লাবটির অনুমোদন নিতে গেলে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রশাসন অনুমোদন দেয়া থেকে বিরত থাকে। ওই গ্রুপের আরো দুই বির্তকিত সদস্য ইবতেশাম রহমান সায়নভ ও  রাতুলকে গত বছরের ১৩ আগষ্ট শিক্ষার্থীরা হাতে নাতে গাঁজা সেবনের সময় ধরে ফেলেন, পরবর্তীতে কান ধরে উঠবস করে ছেড়ে দেন । 

বিষয়টি স্বীকার করে কমিউনিকেশন এন্ড জার্নালিজম ক্লাব বেরোবি এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায় আমরা পুরাতন একটি গ্রুপ ক্রয় করি। পূর্বের গ্রুপের কোনো কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের কোনো যোগাযোগ বা সংযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন, প্রশাসন নিরব। নেই কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, আমরা এর আগেও দেখেছি বিভিন্ন পেইজ থেকে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অনেকে এমন আছে যে নামে মাত্র সাংবাদিক। তারা ছাত্রলীগের হয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছে। ছাত্রদলের স্পষ্ট অবস্থান যে,ছাত্রলীগকে কোনো ভাবেই পুনর্বাসিত হতে দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, যেহেতু ছাত্রলীগ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ তাই যদি কারো বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে অভিযোগ উঠে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। প্রয়োজনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবো।