![ঝরে গেল ৫ লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে গেল ৫ লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থী](https://www.campusbangla.net/media/imgAll/2023August/hsc-foreign-centre-2401301749.jpg)
ছবি- প্রতীকী
২০২২ সালে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) তাদের বসার কথাও ছিল। কিন্তু চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ে গত দুই বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। যা মোট শিক্ষার্থীর ২৩.৮০ শতাংশ।
দুই বছরে বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ‘উদ্বেগজনক’ বলছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করা গেলেও মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এ জায়গায় সরকারকে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা ও ধরে রাখার জন্য সরকার প্রতি বছর উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই, খাবার দেওয়াসহ অন্যান্য খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। এরপরও বিভিন্ন পর্যায়ে এত অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী কেন ঝরে পড়ছে— এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ২০১০ এর শিক্ষানীতির আলোকে নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক অথবা স্বল্পমূল্যে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থী যাতে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে ঝরে না পড়ে, সেই প্রয়াস থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মাধ্যমিকে কেন ঝরে পড়ছে, এটা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। তাই ঝরে পড়া রোধে আমি গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে চিন্তা করছি। নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একেবারে বিনামূল্যে না হলেও স্বল্পমূল্যে যাতে পড়াশোনা করতে পারে সে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ঝরে গেছে এমন শিশুদের কর্মমুখী একটি কোর্সের মাধ্যমে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে।’
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। তাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ জন। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী তিন লাখ ১১ হাজার ৫১৩ জন।
এক মাস বন্ধ থাকবে সব কোচিং সেন্টারশিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ সালে জেএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে নবম শ্রেণিতে (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) রেজিস্ট্রেশন করেছিল ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে এবার এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ জন। অর্থাৎ নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেনি পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্রী আট লাখ ৯১ হাজার ৭২১ জন এবং ছাত্র আট লাখ ১৮ হাজার ৫৭৫ জন। অর্থাৎ তারা শিক্ষার মূল স্রোত থেকে হারিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এবার ঝরে পড়ার হার একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ, ব্যাচটি করোনাপরবর্তী ব্যাচ। যারা কম বিষয় বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। এবার যেহেতু পূর্ণ সিলেবাস এবং সব বিষয়ে পরীক্ষা হচ্ছে তাই তারা হয়তো কুলিয়ে উঠতে পারেনি। তার সঙ্গে বাল্যবিয়ে, কর্মজীবনে প্রবেশসহ অন্যান্য কারণ তো রয়েছে।’
তবে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, করোনার ধাক্কায় দেশে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে সব স্তরের শিক্ষায় প্রতি বছর ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঝরে পড়ার প্রকৃত তথ্য নিরূপণ করা জরুরি। সেজন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এসএন