মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

| ১০ আষাঢ় ১৪৩২

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

বর্ণাঢ্য আয়োজনে নোবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো রিসার্চ ফেয়ার অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৩ জুন ২০২৫

বর্ণাঢ্য আয়োজনে নোবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো রিসার্চ ফেয়ার অনুষ্ঠিত

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘রিসার্চ ফেয়ার’, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় ‘একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠান।

রোববার (২৩ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে দিনব্যাপী আয়োজিত রিসার্চ ফেয়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শতাধিক গবেষণা প্রজেক্ট, উদ্ভাবন ও পোস্টার প্রদর্শিত হয়। এতে অংশ নেয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং গবেষণায় আগ্রহী বিভিন্ন গ্রুপ।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজুয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ (মুরাদ), নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট ডিআইজি মো. হায়দার আলী খান, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ নোবিপ্রবির বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ।

দিনব্যাপী আয়োজিত রিসার্চ ফেয়ারে মাইক্রোবায়োলজি, কৃষি, বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিশারিজ, ফার্মেসি, কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন টেকনোলজি, রসায়ন, সমাজবিজ্ঞানসহ প্রায় সব বিভাগের স্টলেই শিক্ষার্থীরা গবেষণার ফলাফল ও উদ্ভাবন তুলে ধরেন। বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি ও বিভিন্ন ক্লাবও নানা প্রজেক্ট ও পোস্টার প্রদর্শন করে।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

সাধারণ দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা প্রতিটি স্টলে গিয়ে আগ্রহের সঙ্গে প্রজেক্ট সম্পর্কে জানেন এবং গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামীতেও এই ধরনের রিসার্চ ফেয়ার নিয়মিত আয়োজন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং একটি জ্ঞাননির্ভর জাতি গঠনে নোবিপ্রবি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। আমাদের নাগরিক থেকে অধিকারহীন জাতিতে পরিণত করতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রধান টার্গেটে পরিণত করা হয়েছিল। গুম-খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণরুম, গেস্টরুমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হতো। ক্লাসবিমুখ শিক্ষকরা রাজনৈতিক আড্ডায় সময় কাটাতেন, যা ছিল শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি বড় সংকট।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির ভেতর রাজনীতি নয়, বরং শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ বজায় রাখা দরকার। চাইলে আমরাই এই বাংলাদেশকে গবেষণা ও জ্ঞানভিত্তিক জাতিতে পরিণত করতে পারি। বৈষম্য দূর করার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো শিক্ষা।”

অনুষ্ঠানে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “আমরা প্রথমবারের মতো নোবিপ্রবিতে রিসার্চ ফেয়ার ও একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫-এর আয়োজন করতে পেরেছি। একটি জাতিকে উন্নয়ন করা তখনই সম্ভব, যখন সকল মানুষের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা যায়। বর্তমান প্রশাসন বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।”

তিনি আরও জানান, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিষয়ক সহযোগিতামূলক চুক্তি সম্পন্ন করেছে বর্তমান প্রশাসন। এর ফলে নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ন্যূনতম ছয় মাস পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধানে ৩৪২ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে এবং তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক মানের ভাষা শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও চলমান। এতে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাষা শিখতে পারবে।”

এ সময় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ৫০ একর জমি বরাদ্দের অনুরোধ জানান শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে ‘একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান করা হয়।