শেখ হাসিনার শাসনামলে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সদস্যদের নামে দায়ের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি বলেন, গত সরকার ২০২৩ সালে একটি গণবিরোধী শিক্ষাক্রম চালু করে। সেটা চালু করার পর এর সঙ্গে জড়িত একটি চক্র শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়। তারা ফিনল্যান্ডের কারিকুলামের আদলে আমাদের দেশের শিক্ষাক্রম তৈরি করে। যেহেতু বাংলাদেশ একটি অনুন্নত রাষ্ট্র এবং এদেশের মানুষের জীবন মান ও সংস্কৃতির সঙ্গে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা যায় না তাই অভিভাবকরা এই বিতর্কিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো। আমরা সরকারকে এই কারিকুলাম বাতিলের আহ্বান জানালাম এবং আমাদের ৮ দফা দাবিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তাবনা দিলাম।
জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কারিকুলাম নিয়ে আমাদের দাবিগুলো সংসদেও উত্থাপিত হয়। এরপর সারাদেশের মানুষ এই শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগলো। কিন্তু আমাদের দাবিকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আমাদেরকে কোচিং ব্যবসায়ী এবং গাইড ব্যবসায়ীর ট্যাগ লাগিয়ে দেন। এক পর্যায়ে আমাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে আমাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় আমাদেরকে কারাবাস করতে হয় এবং পরবর্তীতে আমরা জামিনে মুক্ত হয়েছি।
নির্যাতনের অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের ওপর অমানবিক জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় জেলে বন্দি রাখার কারণে আমরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে তাদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যেই আমাদের সমস্ত দাবি মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন পরিপত্র জারি করেছে। এজন্য তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আগামীতে যে নতুন কারিকুলাম চালু করা হবে তা অবশ্যই বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি, ধর্ম, জাতিসত্ত্বা, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে চালু করতে হবে।
এ সময় সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৮টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো:
১. প্রাক-প্রাথমিকে (প্লে, নার্সারি, কেজি) বইয়ের বোঝা থাকবে না। শিশুরা আনন্দের সঙ্গে খেলতে খেলতে শিখবে। তাদের মধ্যে সিভিক সেন্স তৈরি করতে হবে।
২. প্রাথমিকে কোনও ভর্তি পরীক্ষা থাকবে না। প্রাথমিক হবে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থাকবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
৩. ৭০ নম্বর লিখিত ও ৩০ নম্বর শিখনকালীন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪. আগামীতে ভারতে বই ছাপানো যাবে না। সব ক্লাসের বই জানুয়ারি মাসের মধ্যে দিতে হবে। বিনামূল্যে নিম্নমানের বই দেওয়া যাবে না।
৫. বইয়ে বিকৃত ইতিহাস স্থান দেওয়া যাবে না।
৬. সব ধর্মের মর্যাদা সমুন্নত রেখে, যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস মতে ধর্মীয় বই সম্পাদন করতে হবে।
৭. দলমত নির্বিশেষে বই সম্পাদন করতে হবে।
৮. প্রত্যেক শ্রেণির বইয়ে ভদ্রতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা, আদব-কায়দা, সত্যবাদিতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্ককে বিস্তর আলোচনা রাখতে হবে।
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সাইফুল হক পনিরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তাপসী খান, আল আমিন হোসেন, কামরুল ইসলাম, খাদিজা বেগম, মো. শাহ আলম প্রমুখ।