
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি আবাসিক সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৫০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) পড়াশোনা করা ৬০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো আবাসিক সুবিধা নেই।
ফলে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৪ জন হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। বাকি শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা বা মেসে থেকে পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে।
আবাসিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও থাকার জায়গা না পেয়ে তাঁদের অতিরিক্ত ভাড়া, যাতায়াত খরচ, বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট সমস্যা ও নিরাপত্তাহীনতার মতো জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। নারী শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি আরও বেশি। শিক্ষাজীবনে মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক চাপ সুষ্ঠু শিক্ষা পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে।
আবাসিক সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি, এটি বহুদিনের সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান করতে সিরিয়াস পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকটের বিষয়টি খুবই অমানবিক। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সমস্যা। এটা দ্রুত সমাধান করা উচিত।
- ইউজিসি চেয়ারম্যান
বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ১৭১টি। এর মধ্যে ৫৫টি পাবলিক ও ১১৬টি বেসরকারি। তবে অধিভুক্ত কলেজ বাদ দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মোট হল, হোস্টেল ও ডরমিটরি আছে মাত্র ২৬২টি। অভিযোগ রয়েছে, নতুন নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট খোলা হলেও আবাসন সুবিধা বাড়ানো হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক চিত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সুবিধা: ৪৪%, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ৬৫%, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ২২%, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ৯৯%, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ২৬%, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাবিপ্রবি: ৩৩.৫%, বুয়েটে ৪৭% শিক্ষার্থীর থাকার জায়গা নেই
এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশির ভাগ নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সংকট আরও প্রকট।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দূর-দূরান্তের গরিব পরিবারের সন্তানরা পড়তে আসেন। সেখানে এসে তারা থাকার জায়গা পান না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখতে হবে। পাশাপাশি ইউজিসিও সহযোগিতা করবে।
- ইউজিসি চেয়ারম্যান
অন্যদিকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তুলনামূলকভাবে আবাসিক সুবিধা ভালো। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক সুবিধা রয়েছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮%, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯২% এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৬% শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এটি বহুদিনের সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান করতে সিরিয়াস পদক্ষেপ নিতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দূর-দূরান্তের গরিব পরিবারের সন্তানরা পড়তে আসেন। সেখানে এসে তারা থাকার জায়গা পান না। শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকটের বিষয়টি খুবই অমানবিক। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সমস্যা। এটা দ্রুত সমাধান করা উচিত। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখতে হবে। পাশাপাশি ইউজিসিও সহযোগিতা করবে।
আবাসন সমস্যার সমাধান ছাড়া একটি মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ হ্রাস এবং পড়াশোনায় মনোনিবেশ নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত এই সংকট দূর করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা যদি অন্তত আবাসিক সুবিধার নিশ্চয়তা না পান, তাহলে তাদের শিক্ষার মান ও মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবাসন সমস্যার সমাধান ছাড়া একটি মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ হ্রাস এবং পড়াশোনায় মনোনিবেশ নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত এই সংকট দূর করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।