বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

| ১৪ কার্তিক ১৪৩২

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

নারী পোশাক নিয়ে ইবি শিক্ষকের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অডিও ভাইরাল

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:২৫, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

নারী পোশাক নিয়ে ইবি শিক্ষকের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অডিও ভাইরাল

শিক্ষার্থী শাসানো ও নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘আব্দুল্লাহ বিন আসাদ’ নামে একটি আইডি থেকে প্রথমে ৪ মিনিট ৭ সেকন্ডের অডিওটি পোস্ট হয়। পরে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি ভাইরাল হয়। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝি। 

ভাইরাল হওয়া অডিওটিতে ওই শিক্ষককে রাগান্বিত স্বরে শিক্ষার্থীদেরকে ধমক দিতে দেখা যায়। ক্লিপে শোনা যায়, ‘ওই মেয়ের হাতে মাইক দিয়েছে কে? ওই মেয়ের আল-কুরআনে কি? ডিপার্টমেন্টকে ধ্বংস করছো না? ডিপার্টমেন্টকে ধ্বংস করার কে অধিকার দিয়েছে তোর? ওই মেয়ে যদি আমার ডিপার্টমেন্টের হতো আমার আপত্তি হতো না। আমি আল-কুরআনের টিচার আমার সাথে গেছে ওখানে জিন্স প্যান্ট, গেন্জি পরে।’ এসময় তিনি পোশাক নিয়ে একটি অপ্রকাশযোগ্য মন্তব্যও করেন অডিওতে।

ভাইরাল হওয়া ওই অডিওতে তিনি আরও বলেন, ‘তোরে আন্দোলনে ডাকছি আমি। কোন অধিকারে তুই আমার ডিপার্টমেন্টের উপরে কথা কইস। তুই আল কুরআনে না থাকলে আমার কিছু যায় আসে না। কোথাকার কোন মৃত একটা পোলা সে তো ছাই হইছে, চলে গেছে। এখন থেকে ক্লাস চলবে, পরীক্ষা চলবে, আন্দোলনও চলবে সব কিছুই চলবে।

এদিকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এসময় মনজরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘শিক্ষকরা নাকি বাবার মতো! আপনার নিজের মেয়ের সাথেও কি এভাবেই কথা বলবেন!’

এই ঘটনায় নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে ও সাজিদ হত্যার  সুষ্ঠু বিচার চেয়ে আগামীকাল সকাল ১১টায় প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে আমার মেজাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে এমন মন্তব্য হয়ে গেছে। আমি আমার এই মন্তব্যের জন্য খুবই অনুতপ্ত।’

তবে নারী শিক্ষার্থী নিয়ে কেন এই ধরনের মন্তব্য করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেদিন সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে নেওয়া হয় সেসময় আমাদের বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক এবং ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন। এমন সময়ে একজন ছাত্রী সাজিদের বাবার কাছে সাজিদের বন্ধু বলে পরিচয় দেয়৷ তখন সাজিদের বাবা একটু বিব্রতবোধ করেন। কারণ, সাজিদ আব্দুল্লাহ হাফেজে কুরআন ছিলেন। তার পরিবারটিও অনেকটা ধর্মীয় রক্ষণশীল মনে হয়েছে। এ কারণে ওই মেয়েটির জন্য সাজিদের বাবার সামনে আমরা শিক্ষকরা একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি। পরে যখন ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তখন আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের বক্তৃতা উপেক্ষা করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে মাইক দেওয়া হয়। ফলে আমার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেজাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে এমন মন্তব্য করেছি। তবে এটি অবশ্যই অনুচিত এবং এই ঘটনায় আমি খুবই অনুতপ্ত।’

এরআগে, গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তে ওই শিক্ষার্থীর শ্বাসরোধে হত্যা হয়েছে বলে জানা যায়। বর্তমানে সিআইডি এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।