
ফাইল ফটো
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজের সোয়া ৬ কোটি টাকার ভুয়া বিল উত্তোলন ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরাম সহ বিভিন্ন দফতরে এ সংক্রান্ত একটি উড়ো চিঠি আসে।
সেই চিঠিতে আর্থিক সুবিধাভোগী ও সহযোগিতাকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমানে পদে রয়েছেন এমন ৬ জন নেতাকর্মীর নাম ছিল।
একই অভিযোগ দায়ের হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এদিকে বিষয়টি নিয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিও অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ইবি ভিসির দুর্নীতির অভিযোগ, সাবেক পিএসকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ
সম্প্রতি দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন সহ সংশ্লিষ্ট কাজের প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত মূলকপি আহ্বান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে।
ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ব্যতীত অন্যান্য তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান। তিনি বলেন, যেসব তথ্য চেয়েছে সেগুলো পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন এখনো খোলা হয়নি। সিন্ডিকেট সভা ছাড়া সেটি খোলা যাবে না। তাই তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।
দুদকের চিঠিতে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ হিসেবে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তৃতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের সর্বশেষ চলতি বিলে দুটি আইটেমে ভুয়া বিল প্রদান করে ৬ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার ৭৬ টাকা উত্তোলন ও ভাগ বাঁটোয়ারা করে আত্মসাত ও অনিয়মের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের যেসব রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তৃতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের এ ব্লকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, বি-ব্লক ১০ তলা ভিত্তির ওপর দশ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দপত্র ও অনুমোদনপত্রের কপি। অনুমোদিত প্রাক্কলনের কপি, শিডিউলের কপি, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দরপত্রের তুলনামূলক বিবরণী, চুক্তিপত্রের কপি, কার্যাদেশ, এমবি কপি ও চূড়ান্ত বিলের কপি, কাজ সম্পন্নের সনদ এবং কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার কর্তৃ সিকিউরিটি মানি জমা সংক্রান্ত রেকর্ড।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র এবং তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকলে তার বিবরণ এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রও চেয়েছে দুদক।
দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের হেড অফিসে একটা অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে হেড অফিস তদন্ত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল তারা সেগুলো পাঠিয়েছে। তবে এখনো খুলে দেখতে পারিনি।
তদন্ত কমিটি সূত্রে, অভিযোগ তদন্তে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। এক মাস সময় থাকলেও তিন মাস পর ৯ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে। তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত ঠিকাদাররাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিষয়টি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনে সেসব সাক্ষাৎকার এবং তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা সুপারিশ সহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে যাবে। তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার, ওখান থেকেই নেওয়া হবে।
এআই