
ফাইল ফটো
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে তার সাবেক একান্ত সচিবকে (পিএস) জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালতে তাকে তলব করা হয়। জেলার সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে উল্লিখিত অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে উপ-রেজিস্ট্রার আইয়ূব আলীর বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ১৮ মার্চ তাকে দুদকের কুষ্টিয়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অনুসন্ধানকার্যে সহযোগিতা করার নিমিত্ত বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ বেলা ১১টায় কুষ্টিয়ায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের কাছে সাক্ষাতকার দিয়েছেন উপাচার্যের সাবেক একান্ত সচিব উপ-রেজিস্ট্রার আইয়ূব আলী। এসময় দুদক কর্মকর্তারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনিত নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তার কাছে জানতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপাচার্যের একান্ত সচিব আইয়ূব আলী বলেন, ‘কিছু শিক্ষক দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে নেতিবাচক তথ্য দিয়েছে। উপাচার্যের দেওয়া বিভিন্ন নিয়োগের বিষয়ে আমার অনেক তথ্য জানা আছে বলে তারা দুদকে জানিয়েছেন। তাই তারা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাকে ডেকেছিল। আমি ওইসব নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য জানি না বলে তাদেরকে জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্যের যেসব অডিও ফাঁস হয়েছিল সেখানে তিনি কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন এ বিষয়ে আমাকে দুদকের কর্মকর্তারা জিজ্ঞেস করেছিল। উপাচার্যের কোনো নিয়োগের বিষয়ে আমি কখনোই তার সঙ্গে কখনো কোনো ধরনের কথা বলিনি বলে তাদেরকে জানিয়েছি।’
অপর এক চিঠিতে উপাচার্যর বিরুদ্ধে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে নিয়োগ বাণিজ্য, মেগা প্রকল্পে অনিয়ম ও নিয়ম বহির্ভূত অর্থ উত্তোলনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় রেকের্ডের সত্যায়িত ছায়ালিপির মূলকপি ১৩ মার্চের মধ্যে দুদকের কুষ্টিয়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
রেকর্ডের বিবরণ অংশে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ড. বখতিয়ার হাসান কর্তৃক অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র এবং তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তার বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রারের কাছে।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘ওই সময় যে দুইজনের নিয়োগ হয়েছিল তাদের কত বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছিল এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে দুদক আমার কাছে জানতে চেয়েছিল। আমি তাদেরকে সকল তথ্য দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে নির্বাচনী বোর্ড সাক্ষাৎকার নেয়। সাক্ষাৎকার শেষে প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় অন্য সদস্যদের সঙ্গে বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ারের মতবিরোধ দেখা দেয়। তাই চূড়ান্ত স্বাক্ষর না করেই বোর্ড থেকে বের হয়ে যান তিনি। এ ঘটনার পর বিভিন্ন সময় ইবি ভিসির দুর্নীতি নিয়ে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপসহ নানা অভিযোগ এনে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ দেন চাকরি প্রার্থী শাহবুব আলম।
এদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্য, মেগাপ্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্নীতি, নিয়মবহির্ভূত অর্থ উত্তোলণসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মকবুল নামের এক ব্যক্তি দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
এআই