শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

| ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রাথমিকে কোচিং করতে হয় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রাথমিকে কোচিং করতে হয় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ এলাকার প্রাথমিকের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠ্যসূচির বাইরে শিক্ষাগ্রহণের জন্য যেতে হয় কোচিংয়ে। এর মধ্যে ৫৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে কোচিং করে। কোচিং-প্রাইভেট টিউশন ও গাইড বইয়ের জন্য অভিভাবকদের মাসে ২০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। 
২৪ ডিসেম্বর, রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটির তথ্য তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে ‘শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে জাতীয় নীতি সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি দেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাটের মোংলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা এবং খুলনার বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর করা এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী-অভিভাবক মিলিয়ে মোট ৮০৪ জনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করেছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। 
অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম।

তিনি জানান, গত অক্টোবর মাসের তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গবেষণার অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ নিজ উদ্যোগে কোচিং করে। স্কুলশিক্ষকের কাছে কোচিং বা টিউশন নেয় ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে আলাদা কোচিং নেয়। স্কুল থেকে কোচিংয়ের জন্য গড়ে ৩৬৭ টাকা, নিজ উদ্যোগে করা কোচিংয়ের জন্য ৮৩৪ টাকা, স্কুলশিক্ষকের কাছে কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনের জন্য মাসে ৫২১ টাকা ব্যয় করতে হয় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের।
এছাড়াও এ শিক্ষাস্তরের ১ দশমিক ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে দেওয়া গাইড বই ব্যবহার করে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, শিক্ষার্থীদের গাইড বই সরবরাহ করা হয় না—শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এমন দাবিও।
এ সব এলকায় প্রতিবছরই বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় কারণ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্কুল প্রতিবার গড়ে ৩.২৬ দিন বন্ধ থাকে বলেও বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়। এছাড়াও করোনা মহামারীর কারনে এসব স্কুল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল। 
এই ধরনের দুর্যোগের পর শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবারের আয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। করোনার সময় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে, ঝরে পড়ার হার বেড়েছে, এবং শিক্ষক ও ছাত্রদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়েছে। এই ক্ষতি এখনো পূরণ করা যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। 

অনুষ্ঠানে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (কার্যক্রম) ও যুগ্মসচিব মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রঞ্জন সাহা পার্থ।