রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

| ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

কঠোর কর্মসূচি আসছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

কঠোর কর্মসূচি আসছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

মশাল মিছিল ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সন্তুষ্ট হননি। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সারাদেশের পলিটেকনিকে মশাল মিছিল করেছেন তারা। সারাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেবেন আন্দোলনরতরা। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেলা ৩টার দিকে বেরিয়ে তারা এ ঘোষণা দেন। 

দাবি আদায়ের কর্মসূচি হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি ছিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনুরোধ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কারণে এ কর্মসূচি শিথিল করে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

বৈঠকে আমরা আন্দোলনরত কারিগরি ছাত্ররা কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নই। সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সম্মিলিতভাবে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চলমান রাখবো।

দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে বৈঠকের জন্য ঢোকেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াসমিনের সঙ্গে তারা বৈঠক করেন। বিকাল ৩টার দিকে বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা জানান, আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট নন। দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন তারা। গতকাল সারাদেশের কোনো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।  

সচিবালয়ে বৈঠকে অংশ নেয়া কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করানো হবে। কিন্তু আমরা কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে এসে দেখি শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের মধ্যে উপস্থিত হননি। যাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তারা আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার স্বপক্ষে কোনো পেপার ওয়ার্ক দেখাতে পারেননি। তারা যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটার কোনো ডকুমেন্ট তাদের কাছে নেই। তারা বলেছেন নিয়োগ বিধি সংশোধন করে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা কোনো দৃশ্যমান ফলাফল পাইনি। দাবি মেনে নিতে কালক্ষেপন লক্ষ্য করছি আমরা।

মাসফিক ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, বৈঠকে আমরা আন্দোলনরত কারিগরি ছাত্ররা কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নই। সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সম্মিলিতভাবে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চলমান রাখবো।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের-এর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আমরা আট মাস ধরে আন্দোলন করছি। গত ৯ সেপ্টেম্বর যখন আমরা সাত রাস্তা অবরোধ করেছিলাম তখন আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত আমরা দেখিনি। আমরা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।

গত বুধবার ছয় দফা দাবিতে দিনভর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সারা দেশে পলিটেকনিকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তারা। যান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। উপাধ্যক্ষ শাহেলা পারভীনকে আর্থিক ক্ষমতাসহ অধ্যক্ষের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। 

আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে- জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে। উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে। এছাড়া পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।