রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

হল খোলার দাবিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম

ইবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ, ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাংচুর

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ৩ আগস্ট ২০২৪

ইবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ, ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাংচুর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ডায়না চত্বর থেকে পৃথক বিক্ষোভ করে প্রধান ফটকের সামনে মিলিত হয় শহশ্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও জনতা। পরে শিক্ষকরা ফটকের সামনে অবস্থান নিলেও শিক্ষার্থী ও জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি ফটক থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার ঘুরে ফটকে মিলিত হয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে।

পরে দুপুর ১২টা থেকেু সকলের ঐক্যবদ্ধ সমাবেশ হয়। এই কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক, ভ্যানচালক, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এদিকে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও বিক্ষোভ থেকে সরকারকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।

পরে দেড় ঘন্টা পর সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে আন্দোলন চলাকালে ক্যাম্পাসের শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও ছাত্রলীগ ও শোক দিবসের ব্যানার ছিড়ে ফেলেন শিক্ষার্থী। প্রধান ফটকে রং দিয়ে বিভিন্ন প্রতিবাদী শ্লোগান লিখতেও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও ২৪ ঘন্টার মধ্যে আবাসিক হলসমূহ খোলার আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা।

জানা গেছে, ক্যাম্পাসে কর্মসূচি ১১ টায় ঘোষণা করা হলেও মুষলধারে বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে সকাল ১০টা থেকেই শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায় প্রধান ফটক এলাকায়। পরে সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমলে ডায়না চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে প্রধান ফটকে যান তারা। এদিকে একই সময়ে ‘নিপীড়ন ও বৈষম্য-বিরোধী সচেতন শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। এই মিছিলটিও ফটকের সামনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলিত হয়।

পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস পার্শ¦বর্তী শেখ পাড়া ঘুরে প্রধান ফটকে আসেন। এদিকে শিক্ষকরা ফটকেই অবস্থান নিচ্ছিল। পরে সকলে আবার মিলিত হয়ে ফটক সংলগ্ন কৃষ্ণচূড়া গাছের গোড়ায় সমাবেশ করে। এসময় কলা অনুষদের ডিন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান, ধর্মতত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. নুরুন্নাহার সহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এসময় অন্যদিকে পুলিশ ও ব্যাটেলিয়ন আনসার অবস্থান নিলেও তারা কোনো বাঁধা দেননি।

বিক্ষোভ চলাকালে, ‘মুজিব কন্যা হাসিনা, তোমায় ভালোবাসিনা’, ‘মোদির পোষা হাসিনা, তোমায় ভালোবাসিনা’, ‘খুনি হাসিনার অনেক গুন, পুলিশ দিয়ে করছে খুন’, ‘এদ দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি’, ‘শেখ হাসিনা গদি ছাড়, গদি কি তোর বাব দাদার’, ‘সন্তানহারা মায়ের ডাক, শৈরাচার নিপাত যাক’ সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন শিক্ষার্থী ও জনতা। একপর্যায়ে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যাক্তিকেও শ্লোগানের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

এদিকে আন্দোলন চলাকালে একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে অবস্থিত শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন। কার্যালয় ও এতে থাকা টেবিল-চেয়ার, টিভি, ওয়াইফাই রাউটারসহ অন্যন্য সামগ্রী ভাঙ্গেন তারা। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ক্যাম্পাসের ফটকে ও ভেতরে থাকা ছাত্রলীগ ও শোক দিবসের ব্যানার ছিড়ে ফেলেন বিক্ষুব্ধরা। এছাড়া প্রধান ফটকের দেওয়ালে রং দিয়ে বিভিন্ন প্রতিবাদী শ্লোগান লিখেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ হলের ‘দেশরত্ন’ মুছে দিয়ে ‘সৈরাচার’ লিখেছেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, আমাদের এখন এক দফা এক দাবি। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা আর আমাদের সন্তানদের আর লাশ দেখতে চাই না। আমরা শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাড়িয়েছি। কেউ আমাদের সন্তানদের গায়ে আর ফুলের টোকা দিতেও সাহস করবেন না। শৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও এত শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়নি। বিগত ১০টি দিন আমরা রাতে ঘুমাতে পারিনি। আমরা আর এমন রাত কাটাতে চাই না। আমরা শান্তি চাই।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমরা এতদিন অসিংস আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলন ৯ দফা থেকে এক দফায় রূপ নিয়েছে। আমরা বারবার প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের সাথে বসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। এখন আর আমরা পেছনে ফিরবো না। আমরা ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসননে বলতে চাই, ২৪ ঘন্টার মধ্যে হলগুলো খুলে দিতে হবে। আমরা আর কোনো আল্টিমেটাম দিব না। এর মধ্যে হল না খুললে আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব।

অহসযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল (রবিবার) থেকে আমরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করবো। আমাদের দাবি আদায়ে মা-বাবা, চাচা-চাচি, খালা-খালু, ভাই-বোন প্রতিবেশি সহ সকলকে রাজপথে নামার আহ্বান জানাচ্ছি। এটা আমার আন্দোলন নয়, এটা আপামর জনতার আন্দোলন। আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। আমরা বিজয় নিয়েই ফিরবো।