গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ১ নাম্বার গেটের সামনে ছাত্র-জনতার ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি হামলাকারীদের । বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটিও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ আইনি ব্যবস্থা চোখে পড়ার মত নয় ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে নানান জটিলতা।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে প্রায় অতিরিক্ত ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহামুদ কাইসার বলেন,
তদন্ত কমিটিকে, তদন্ত রিপোর্ট সাবমিট করার জন্য বেঁধে দেওয়া ৭ কর্মদিবস অনেক আগেই শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্টের কোনো হদিস নেই। রিপোর্ট সাবমিট করার জন্য অতিরিক্ত কোন সময় চেয়েছেন, এমন কোন খবরও পাইনি। কমিটি তৈরির হবার পর কাজ শুরু করা নিয়েও গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করেছিলাম, তথ্য সংগ্রহের নোটিশও কমিটি গঠন হওয়ার কয়েক কর্মদিবস পর দিয়েছিল, যার প্রচারণাও যথেষ্ট ছিল না। এর আগে একাধিক অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। আবু সাঈদ সহ অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর রক্তের উপর দিয়ে, হামলাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের এমন ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার এবং এতকিছুর পরেও তদন্ত কমিটির এমন গা ছাড়া ভাব তাদের দায়িত্বের প্রতি উদাসীনতার দিকেই ইঙ্গিত করে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুলাইমান জানান,আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে এখনো স্বৈরাচারের দোসরদের শাস্তি না হওয়া দুঃখজনক। তদন্ত কমিটি ও বর্তমান প্রশাসন তাদের কাজে অবহেলার পরিচয় দিচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পালস্ বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেক শিক্ষক এখন এসে মানবতার কথা বলছে,নিজেদের খাঁটি অভিভাবক হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছে। যারা স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতি সিম্পিথী দেখানোর চেষ্টা করবে তাদের জন্য হুশিয়ারি উচ্চারণ করতে চাই।এই ক্যাম্পাস এখনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের। দ্রুত বিচার না পেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নামবে,প্রয়োজনে ভিন্ন কোন রাজনৈতিক দল আমদানি করে হলেও তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবো। শেষে শুধু এটুকু বলবো যে, দেশের কোন ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার না হলেও আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে হতে হবে, দেশের কোন ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলেও আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে হতে হবে। আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন মিজানুর রহমান জানান, আমরা আমাদের একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছি যেটি আগামী সপ্তাহে প্রশাসনের কাছে জমা দিবো এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করবের, উল্লেখ যে আমরা সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে কিছুটা সময় বাড়িয়েছিলাম।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী জানান,তদন্ত কমিটির সাথে কথা হয়েছে আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে তারা আমার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই আমরা সিন্ডিকেট মিটিং করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করবো
ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়িত ব্যক্তিদের (শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী) চিহ্নিতকরণ ও শাস্তির ধরন নির্ধারণের জন্য তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন মিজানুর রহমান। সদস্যসচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান এবং সদস্য অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফ।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয় সেই প্রতিবেদনে ।